আল কুরআন ও কোভিড-১৯ মহামারি বিষয়ক পর্যালোচনা-পর্ব ২
আল কুরআন ও কোভিড-১৯ মহামারি বিষয়ক ঐতিহাসিক পর্যালোচনা
আজ পৃথিবীতে কোথাও পঙ্গপাল, কোথাও দাবানল, কোথাও সুনামী, কোথাও টাইফুন, কোথাও উষ্ণতা, কোথাও ভাইরাস। সার্স, ইবোলা, জিকা, সোয়াইন, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, এইডস, প্রভৃতি হরেক ভাইরাস কোনোটাতেই আল্লাহর আশ্রয়ে যাওয়ার কথা ভাবেনি মানুষ। কেবলই এগুলোর সাথে যুদ্ধের হুংকার দিয়েছে। এ সব মোকাবেলা করবে- এই মর্মে ঘোষনা দিয়েছে সবাই।
প্রকৃতিতে এ সমস্ত আযাব-গযব কেনো আসছে, নিজেদের কর্মকাণ্ডে কোথায় ভুল আছে, এমন আত্মজিজ্ঞাসা কখনো শাসকশ্রেণি করে না। শুধু তাই নয়, স্রষ্টার নাম পর্যন্ত উল্লেখ করে না কথা বার্তায়। গোমরাহীর এক প্রান্তসীমায় যেন উপনীত বনি আদম।
সূরা আসরে বলা হয়েছে,‘ সময়ের শপথ, নিশ্চয় মানুষ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত, বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলরা ছাড়া, যারা সত্যের উপদশে দেয় এবং এত ধৈর্য ধারন করে থাকে’। (সূরা আসর)
সুতরাং ভাবনার অনেক বিষয় আছে এখানে।
আজও আমরা দেখছি অধিকাংশ মানুষি এ আযাব-গযব থেকে কোনো শিক্ষা নিচ্ছে না। দেশে দেশে সমকামিতা আইনসিদ্ধ হয়েছে। লুন্ঠন, শোষণ, বিতাড়ন, অপহরণ, খুন,গুম, ধর্ষণ, নির্যাতন, চরিত্রহনন, গণহত্যা, নৃশংসতা, ক্ষমতার দম্ভ, প্রভৃতি অনাচার দানবীয় রূপ গ্রহণ করেছে।
করোনা আসার পরও অধিকাংশ দেশে পর্ণোগ্রাফি দেখার হার বেড়েছে, সেক্স টয় বিক্রির হার বেড়েছে, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম লুট হচ্ছে, দেশে চাল চুরি বেড়েছে। নৈতিক দেউলিয়াত্ব সর্বগ্রাসী হয়েছে। রমজানে রোযা রেখেও মুসলিমরা দিনভর সিনেমা দেখছে, গান-বাজনায় মত্ত থাকছে। মহান আল্লাহর বাণীটি পড়ার মানসিকতা বা তার বক্তব্য অনুধাবনের চেষ্টা করা আজ সময়ের অনিবার্য দাবী হয়ে উঠেছে। এই জন্য কেউ কেউ কুরআনের মর্মবাণী অনুধাবনের জন্য অর্থসহ কুরআন পড়ার চেষ্টা করছে। এ বিপদ- মুসিবতে তাদের ঈমান দৃঢ় হচ্ছে, আল্লাহর সাথে তাদের সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুমিনদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তারা শক্তিশালী হচ্ছে।
করোনার আঘাতে বড় দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঝড়ে বড় গাছের ডালপালা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত দুই শতাব্দী ধরে পশ্চিমারা মুসলিম দেশগুলোর ওপর একতরফা নির্যাতন চালিয়ে আসছে। প্রথম মহাযুদ্ধে তুর্কী সালতানাতের পতনের পর মুসলিম দেশগুলো ইউরোপের উপনিবেশে পরিণত হয়।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ইউরোপ দুর্বল হলে অধিকাংশ মুসলিম দেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে শুরু করে। অবশ্য স্বাধীনতা লাভ করলেও পরোক্ষভাবে মুসলিম বিশ্ব এখনো তাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে।
তবে আশা করা যায়, করোনার পর বিশ্বে নতুন করে পরিবর্তনের সূচনা হবে। আমেরিকার একাধিপত্যের দিন শেষ হবে। মুসলিম দেশসমূহে ইউরোপ-আমেরিকার হস্তক্ষেপের সামর্থ্য ক্রমেই হ্রাস পাবে। পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলারদের অবস্থান দুর্বল হবে। পাশ্চাত্যের ব্যাপারে মুসলিমদের মোহভঙ্গ হবে।
শেষ পর্যন্ত করোনা মুসলিম বিশ্বের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ। সেটা হবে আল্লাহর অনুগ্রহে, তবে আল্লাহর বাণী বাহকদের বুদ্ধি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দ্বারা দায়িত্বপালন করতে হবে।
করোনা অবশ্য মুসলিম উম্মাহর দুর্বলতাও স্পষ্ট করে দিয়েছে। রাসূল (সাঃ) ১৪০০ বছর পূর্বে এ ধরণের পরিস্থিতিতে করণীয় কি তা বলে গেছেন। কিন্তু ডব্লিউএইচও বলার পূর্বে আলেম সমাজ আমাদেরকে তা বলতে পারেননি। উল্টা বিভিন্ন বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য রেখে পরিবেশ ঘোলা করেছে। সামাজিক মাধ্যমে হাস্যকর এক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। মক্কায় দুর্ভিক্ষে রাসূল (সাঃ) কুরাইশদের খাদ্য ও স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। অথচ আমাদের অনেক লাখ টাকার ওয়াজিনদের এখন এ দুর্যোগে দেখা যায় না। খেলাফত ধ্বংস হওয়ার পর থেকে ধর্মীয় ব্যাপারে মানুষ শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তে আলেমদের নির্দেশনাই মেনে চলেছে। কিন্তু বর্তমানে ধর্মীয় ব্যাপারেও আলেম সমাজ সম্মিলিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না। আগামী দিনের অর্থনৈতিক মন্দায় করণীয় কি সে ব্যাপারেও তাদের কাছ থেকে কোনো দিক নির্দেশনা নেই।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা ব্যস্ত বিভিন্ন ধর্মীয় ফিকহী ছোট খাটো মাসলা-মাসায়েলের বিবাধে। তাও নিজের পছন্দের মাসলকের বিরুদ্ধে ফাতওয়া গেলেই তা শুরু হয়। বিপরীত দিকে আরো শক্তিশালী যুক্তি থাকলেও তা যদি দেওবন্দি সালাফদের মতের বাহিরে হয়; তাহলে কোনভাবেই তা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আজব! কেতনাহি জাহিলিয়্যাত!
আমাদেরকে এসব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, ফেরাউনের বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য মূসা (আঃ)-এঁর ছিল আল্লাহর নিদর্শন লাঠি আর আমাদের আছে আল্লাহর নিদর্শন আল কুরআন। সেই কুরআনকে আঁকড়ে ধরতে হবে। এর মর্মবাণি অনুধাবন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সামর্থ্য দিন। আমীন!
মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
পিএইচডি গবেষক
ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
Email: hadayetcv@gmail.com
আরও পড়ুন: আল কুরআন ও কোভিড-১৯: মহামারি বিষয়ক ঐতিহাসিক পর্যালোচনা-পর্ব-১