যদি ‘আত্মহত্যা’ই করতে চান,তবে…
আত্মহত্যা মানে নিজেকে নিজেই হত্যা করা। অপরকে হত্যা করা পাপ, তেমনি নিজেকেও হত্যা করাটা পাপ। বেঁচে থাকতে যারা দুর্ভাগ্যবশত জীবন ধারণে অপারগ হন তখন আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তারা। আবার অপমানে জর্জরিত বা কোনও মনের বাসনা পূরণ না হলেও সেই আত্মহত্যা। কিন্তু তার জন্য আত্মহত্যার পথ কেন বেছে নিতে হবে?
সম্প্রতি বলিউডে হালের জনপ্রিয় নায়ক সুশান্ত রাজপুত সিং আত্মহত্যা করেন। কেন সেটা বলে যাননি। মৃত্যুর পর অনেকেই তার জন্য কষ্ট পেয়েছেন। তার সিনেমাগুলো বার বার দেখছেন। তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন। কিন্ত সবাই তো সুশান্তের মতো ভাগ্যবান নয়। অবশ্য যারা একটু গভীর চিন্তা করেন তারা হয়ত বলবেন আত্মহত্যাটা সমাধান নয়। সে মারা গেছে তাতে কিছু যাই আসেনা। মৃত্যুর পর যে ভালোবাসা পাচ্ছেন তাও কয়েকদিন পর মিলিয়ে যাবে। জীবন চলবে জীবনের গতিতে।
তবে আপনার কি সমস্যা? আপনি কি কারণে আত্মহত্যা করতে চান? আপনি কি হাসপাতালের বেডে শুয়ে মরণব্যাধি ক্যানসারের মতো কোনো জটিল রোগের যন্ত্রনাই ভুগছেন, যে আপনি এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে আত্মহত্যা করবেন? নাকি এক্সিডেন্ট করে আপনার হাত-পা সব অকেজো হয়ে গেছে যে এখন বেঁচে থাকা না থাকা সমান কথা অথবা পরের বোঝা হতে হবে মনে করে বাঁচতে চান না?
যদি আপনার ক্ষেত্রে তার কোনটাই না হয়ে থাকে তাহলে কি এমন যন্ত্রনা আপনার, আপনি আত্মহত্যা করবেন? পৃথিবীতে এসেছেন, একদিন মরতে আপনাকে হবেই। কোনো কিছুর মুখাপেক্ষি না হয়ে বা সমস্যা মোকাবেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা না করে জীবনটা নিজেই শেষ করাটা বোকামি।
হাসপাতালের বিছানায় কঠিন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিটাও জানেন পৃথিবীর মায়া। যিনি বাঁচার জন্য কত আকুতিই না করেন। সহায় সম্বল বিক্রি করে হলেও, বা কারো অনুদান নিয়েও বাঁচতে চান।
সমাজে কতো মানুষ আছেন যারা সহায় সম্বল হারিয়ে অন্যের দয়ায় বেঁচে আছেন। আপনি তো তাদের মতো নন। তারা যদি সবকিছু হারিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারে আপনি কেন নয়?
রাস্তায় যিনি ভিক্ষা করেন তারও মানসম্মান আছে। তিনিও চাননা ভিক্ষা করতে। তবুও নিজে বেঁচে আছেন, এমনকি পরিবারকে বাঁচাতে তিনি মানসম্মান ধূলাই মিশিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। আপনার অবস্থা কি তার মতো হয়েছে ? নাকি ভাবছেন ভিক্ষুকটা জাত ভিক্ষুক। তার পরিবার ধরেই ভিক্ষুক তাই তার ভিক্ষা করতে লজ্জা নেই।
আর আপনি একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য, অথবা অল্পদিনেই গণ্যমান্য ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন, যা সব শেষ হয়ে গেছে বলে কাউকে মুখ দেখাতে পারছেন না বিধায় আত্মহত্যা করতে চান। এমনটাই যদি ভাবেন তাহলে এটাও ভাবতে পারেন- মানুষই একমাত্র জীব যাদের বেঁচে থাকতে এই মানসম্মান দরকার হয়। কিন্তু সংকটে পড়লে আপনি মানসম্মানের দিকে কেন তাকাবেন, যা আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে? আসলে আপনার এমন চিন্তাধারাই আপনাকে হারিয়ে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন- করোনা সংকটে নিঃসঙ্গতা কাটাতে ডব্লিউএইচওর পরামর্শ
আমরা ‘লোকে কি বলবে’ এই ভেবে কাটিয়ে দেই জীবনের অর্ধেকটা সময়। এমনটা না হলে হয়ত আপনি আরও বেশি উন্নত জীবন ভোগ করতে পারতেন। না তার জন্য আপনাকে কোনো অপরাধমূলক কাজ করতে বলিনি। আপনি সঠিক পথেই বাঁচার পথ খুঁজুন। মুশকিলে পড়লে একটু সময় নিয়ে ভাবুন, নিশ্চয়ই সমাধান পেয়ে যাবেন।
বয়সন্ধি থেকে শুরু করে প্রায় যুবক-যুবতি পর্যন্ত বয়সসীমায় যারা থাকেন তাদেরকে আত্মহত্যা করতে দেখা যায় বেশি। তারা যে গণ্ডির মধ্যে থাকেন সেই গণ্ডিটাকেই পৃথিবী মনে করেন, তাই আত্মা দিয়ে কোনো কিছু না পেলেই মনে করে মরে যাবো। তাদেরই বা দোষ কিসের? আমরা যারা তাদের সংস্পর্শে আছি তারা কি একটু সময় নষ্ট করে তাদের উপদেশ দিয়েছি? হয়ত ভাবছেন কেনই বা শুধু শুধু উপদেশ দিতে যাবো?
কেন দেবেন না উপদেশ? আপনি তো জীবন থেকে অনেক কিছু শিখেছেন, হয়ত ঠেকে শিখেছেন। সেটাতে আপনি ভাগ্যবান। তবে চারপাশে যারা বেড়ে উঠছে তাদের প্রতি আপনার কিছু নৈতিক দায়িত্ব থেকেই যায়।
ওই বয়সটুকুতে বেশি দেখা যায় প্রেম ঘটিত বা মনোকষ্টে আত্মহত্যা করতে। একবার ভেবে দেখেছেন আপনি যখন ভূমিষ্ঠ হয়েছেন তখন আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন আপনার বাবা-মা। আজ অন্যের জন্য প্রাণটা বিকিয়ে দেয়ার আগে তাদের মুখটা স্মরণ করুন। তাদেরকে গাড়ি-বাড়ি করে দিতে না পারলেও কঠিন সময়গুলোতে তাদের পাশে থাকুন। জীবনে কি পেলেন বা পেলেন না সেটা নিয়ে ভাবলে শুধু সময় নষ্ট হবে। তার চেয়ে ভাবুন কিভাবে জীবনের টার্ন নেবেন।
সর্বশেষ যদি বেঁচে থাকার মানেই না খুঁজে পান তাহলে মরার আগে কিছুদিন নিজের ইচ্ছামতো সময় কাটান। বিনোদনে থাকুন। ভ্রমণ করুন। মরেই যখন যাবেন বিশ্বটা দেখেই মরুন। পথশিশু কিংবা এতিমদের সাহায্য করুন। কিছু গাছ লাগিয়ে তাতে পানি দেন, প্রতিদিন যত্ন নেন। হাসপাতালে গিয়ে কঠিন কোনও ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্তদের সেবা করুন। বৃদ্ধাশ্রমে যেয়ে বয়স্কদের সঙ্গে কিছুটা সময় দিয়ে আসুন। ব্লাড ডোনেট করুন। যদি মরেই যেতে চান তাহলে আপনার কিডনি, চোখ, প্রয়োজনীয় অঙ্গ গুলো দান করে যান। আপনার অঙ্গ দিয়ে অন্য কাউকে বাঁচিয়ে দিয়ে যান। তাহলে অন্তত কেউ আপনাকে মনে রাখবে। তবে ‘আত্মহত্যা’ জীবনের কোন মুক্তি নয়, সমাধান নয়।
গণমাধ্যম কর্মী