Prottashitoalo

ভাইয়া আবার এসে আমাকে লক্ষে দাঁড় করিয়ে দেন

0 475

আমার চলাফেরায় কোনো মেয়েলি ভাব নেই বললেই চলে। আর গতানুগতিক চিন্তা ভাবনার ধারে কাছেও আমি নাই। আম্মু মাঝে মাঝে বলে আল্লাহ নাকি আমাকে ভুল করে মেয়ে বানাই দিছে আমাকে ছেলে বানানো উচিত ছিলো। আমি সব থেকে বেশি অপছন্দ করি চারটি জিনিস কারণ এগুলো আমার কাছে সময় অপচয় ছাড়া আর কিছুই না।
১.শপিং করা
২.মেয়েলি পোশাক আশাক পড়া। যেমনঃ শাড়ি,থ্রীপিস সহ যত মেয়েলি পোশাক আছে আর কি কিন্তু হিজাব পরিধান করি।
৩.মেকআপ করা
৪. নেকামি করে কথা বলা।

এছাড়াও আমি কোনো উৎসব, দিবস পালন করতে পছন্দ করি না। কারণ এগুলো প্রতি বছরই ঘুরে ঘুরে আসে। আমি এর মধ্যে কোনো নতুনত্ব খুজে পাই না। এ যে দেখুন না ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ, বড় দিন ছোট দিন, বুদ্ধ পূর্ণিমা এই পূর্ণিমা ঐ পূর্ণিমা, নারি দিবস, পুরুষ দিবস,মা দিবস,ভালোবাসা দিবস, শহিদ দিবস,নজরুল জয়ন্তী, সুবর্ণ জয়ন্তী, আরো কত কি বাবারে বাবা গুলো মাথায় আসলেই মনে হয় চিল্লাইয়া বলি ধরণী তুমি দুই ভাগ হও আমি মাটির নিচে চলে যাই। আর সাথে তো আছেই আধুনিকতার নামে বাবুদে নিয়ে নোংরামি। এগুলো নিয়ে পড়ে আরেক দিন লেখা যাবেখন।

এবারের ঈদও আমার কাছে ব্যাতিক্রম মনে হয়নি আমিও কাউকে উয়িস করিনাই আম্মুকেও না ভাইয়াকেও না। যদিও সবাই করোনা ইস্যু উল্ল্যেখ করে আজাইরা স্মৃতি চারণ করেছে যদিও এর মধ্যে অধিকাংশই ছিলো লোক দেখানো আর ল্যাইম কমেন্টের বাহবা কুড়ানো। যাই হোক, আমিও এবার ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি নিউজের কাজে ঢাকায় থেকে যাই এবং ঈদের দিনও অফিসে মানে নিউজরুমে নিউজ করি। একেতো স্টাফ কম ৬০% ছুটিতে আর বাকি ৪০% নিউজ আপডেট দিয়ে যাচ্ছি এদিকে অনেকে ইনবক্সে ঈদের উয়িস করছে ফর্মালিটি মেন্টেইন করতে ওনাদের উইসের ফিটব্যাক দিচ্ছি।

কিন্তু এর মধ্যে এটা টেক্সট পেলাম ব্যাতিক্রম। ” Amar bssay ay” এই টেক্সটা করেছে আমার ভাই(Towhid Siddiki)। ভাইয়াকে অনেক এক্সকিউজ দিলাম লাভ হলো না আর হ্যা আমি আপনাদের মতো একটা ল্যাইম এক্সকিউজও দিয়েছিলাম করোনার তাও লাভা হয় নাই। এদিকে আবার ভাইয়ার সাথেও ভাবিও বললো কিন্তু ভাবিকেও অফিসের এক্সকিউজ দিয়ে লাভ হলো না কে শোনে কার কথা ভাইয়া আর ভাবি দুই জনই বললো সমস্যা নেই তোমার লেট হোক হাতের কাজ শেষ করেই আসো আমরা অপেক্ষা করছি। তারপর অফিসের কাজ শেষ করে ভাইয়ার বাসায় গেলাম রাত ৮ঃ২০মিনিটে।

ড্রাইবার মামা বললো মেডাম আপনার বাসা বানানী আজ মোহাম্মদপুর কেন?ড্রাইভারকে একটু শক্ত গালায় বললাম গাড়িটা কিসের জন্য দিসে মামা? জ্বি কিন্তু ঢাকায়তো আপনার আপন জন কেউ নাই যত দূর জানি আপনার সেফটি  আগে মেডাম। হাসি দিয়ে বললাম মামা আপনারে কে বলছে আমার ভাইয়া আছে আর এখন সেখানে যাবেন তারপর বাসায় ড্রপ করবেন। ড্রাইবার এবার চুপ হইলো। যাই হোক, আমি গিয়ে দেখি ভাইয়া গেইটে দাড়িয়ে আছে সাথে মিষ্টি ভাবিও।

ভাইয়ার যায়গায় অন্য কেউ হলে আমি জীবনেও যাইতাম না। হয়তো ভাইয়ার বিশ্বাস আমাকে কাল টেনে নিয়ে গেছে। যেখানে মানুষ করোনাকে এতো ভয় পাচ্ছে সব থেকে নিকট আত্মীরা বাসায় গেলেও মানুষ ডিস্টেন্স মেন্টেইন করছে সেখানে ভাইয়া আমাকে পাশে বসিয়ে নিজের হাতে খাবার সার্ব করে খাওয়ালো আর আন্টি ও ভাবি যত্ন করে চমৎকার রান্না করলো। ভাইয়া ভাবির সাথে গল্প করছিলাম কিন্তু আন্টি যে এই কম সময়ের মধ্যে টেবিল খাবার ভর্তি করে ফেলবে তা ভাবতে পারি নাই । নিউজের কাজে প্রায়ই বাহিরে যাই অনেক ধরনের সিচুয়েশন ফেস করি। তাই বাসায় যাই না আজ পাঁচ মাস। একটাই ভয় যদি আমি বাসায় যাই আমার সাথে জিবানু থাকে। কিন্তু কাল ভাইয়া যেভাবে বললো হয়তো আমরা এক মায়ের পেটের আপন ভাই বোন না কিন্তু তার থেকেও বেশি।

আরও পড়ুন করোনার নতুন টিকা এনভিএক্স-কোভ২৩৭৩ এর মানব পরীক্ষা শুরু

আমার একটা বিশাল বড় ফ্রেন্ড সার্কেল আছে কিন্তু কেউ কিন্তু একবারও জিজ্ঞেস করে নাই দোস্ত তুই কি খেয়েছিস। এই যে সবাই নিজেকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড দাবি করিস একবারও আস্ক করিসনি তুই কেমন আছিস। একমাত্র আম্মু ছাড়া আর ভাইয়া ছাড়া। ভাইয়াকে সেকেন্ড মাদার বলি হয়তো এজন্যেই কারণ আম্মুর মতো কেয়ার করে।

সব সময় একা চলাফেরা করে অভ্যাস তাই সাহসের কথা নাইবা বললাম। আর আমার কোনো ফ্রেন্ড বা কোনো সার্কেলও নাই আমি তাদের সাথে মিশতেও পছন্দ করি না। আমার একা চলতেই ভালো লাগে।এজন্য হয়তো আমি সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট আর সো কল সমবয়সীরা পরিবার থেকে টাকা নিয়ে চলে আর আমি পরিবারের দায়িত্ব সামলাই।যখনই আমি আমার গোল্স কিংবা লক্ষ থেকে বিন্দু মাত্র দূরে সরে যাই ভাইয়া আবার এসে আমাকে লক্ষে দাঁড় করিয়ে দেন। আর যাদের সাথে মিশি এমন মানুষ খুবই কম কারন এটা একমাত্র তারাই জানে যাদের আমি যাদের সাথে চলাফেরা করি।

আমি স্বভাবে ইন্ট্রোভার্ট। কিছু মানুষ অত কিছু মেইনটেইন করতে পারেনা। না যোগাযোগ মেইনটেইন করে; না সম্পর্ক। এগুলে কেম জানি বিরক্ত লাগে। এমনকি নিজের প্রতি যে এক ধরনের ব্যক্তিগত মমতা এবং যত্ন মেইনটেইন করা লাগে, এটাতেও আমি ড্যাম কেয়ার।

আমি নিজেকে কোন ছকে বাঁধতে চাইনা। আমার মত যারা তারা আসলে তাদের আশেপাশে কোন দায়বদ্ধতার দেয়াল, মায়ার শেকল, সামাজিক নিয়ম কিংবা সম্পর্কের অলিখিত সাংবিধানিক ধারা সৃষ্টি হতে দেয়না। এরা আসলে একটা সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের সারিবদ্ধ সিস্টেম থেকে সরে আসে।
মানুষ স্রেফ বাঁচতে চায়। একদম অন্যভাবে। অন্য নিয়মে। আর আমি তাদের মধ্যে একজন।

নিজের ভেতর অন্য একটা জগত সৃষ্টি করি। আমি বিশ্বাস করি- নিয়ম মেনে নিজেকে সৃষ্টি করা যায়না। নতুন কিছু সৃষ্টি হলেই কেবল তার স্রষ্টা হওয়ার গৌরব অর্জন করা যায়। সিস্টেম থেকে বের হয়ে বাঁচতে বাঁচতে একদিন নিজেই নিজের ঈশ্বর হয়ে উঠে। যে ঈশ্বর কখনো কারো উপাসনার তোয়াক্কা করেনা।

গল্প সেকন্ড মাদার
লেখাঃ সানজিদা রিনি
গণমাধ্যম কর্মী,

Comments
Loading...