দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
সিলেট-সুনামগঞ্জ ভাসিয়ে এবার পাহাড়ি ঢলে ডুবছে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, ফেনী। নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই চরম অবনতি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কটে মানবেতর দিন কাটছে তাদের। বাড়ি-ঘর ছেড়ে অনেকেই বের হয়েছেন আশ্রয়ের খোঁজে।
জানা যায়, কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর ৩টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে পানি। এতে নতুন নতুন এলাকাসহ ৯ উপজেলার ২৮৪টি গ্রাম প্লাবিত। পানিবন্দি প্রায় এক লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। কারো কারো নৌকার মধ্যে কাটছে দিন।
গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘাট ও যমুনার পানিতে ডুবেছে সদর, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলার নদীবেষ্টিত ১৬৫টি চরের নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি প্রায় ২০ হাজার পরিবার। ফসলি জমি, বসতবাড়ি পানির নিচে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ যোগাযোগ। জামালপুরে টালমাটাল যমুনার কাছে অসহায় বন্যার্তরা। বিপৎসীমা অতিক্রম করে ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দুর্গম চরাঞ্চল সবখানে থইথই পানি।
এদিকে, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় উত্তর দৌলতপুর এবং দরবারপুর গ্রামে মুহূরী নদীর দুটি বাঁধ ভেঙে অন্তত ৭টি গ্রাম প্লাবিত। পানি ঢুকে পড়েছে ফুলগাজী বাজারেও। এতে বন্যা আতঙ্কে দুর্বিসহ অবস্থা এসব এলাকার মানুষের।
আরো পড়ুন: ভারি বর্ষণে খাগড়াছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পাহাড় ধসের আশঙ্কা
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার পুরো এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থা আগের মতোই। নতুন করে কংশ নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। জেলা সদরের মেদনী ইউনিয়নের বড়ওয়ারী থেকে ঠাকুরাকোনা হয়ে বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর দিয়ে ফকিরাবাজার পর্যন্ত ৪৬.৪০০ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধে ধস দেখা দেয়। শুক্রবার মেদনী ইউপির জঙ্গল বড়ওয়ারী কংশ নদীর পানি বেড়ে ৫০ মিটার বাঁধ ধসে যায়।
সিলেট-সুনামগঞ্জের পর এবার হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও নবীগঞ্জে দেখা দিয়েছে বন্যা। দুদিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিশুদ্ধ পানি খাবার সংকট দেখা দিয়েছে দুর্গত এলাকায়।
এদিকে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যার পানিতে নিখোঁজ সাত জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। সোমবার (২০ জুন) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে সিলেট সদরে তিন জন, সুনামগঞ্জের ছাতকে তিন জন ও মৌলভীবাজারে একজন রয়েছেন।